ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বান্দরবানে ২১কোটি টাকার ওভারলে কাজে অনিয়মের অভিযোগ

যযযযযমোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ

বান্দরবানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এর ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৭.১৪কি:মি ওভারলে কাজে নিম্নমানের পাথর, বিটুমিন ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করছেন এলাকা সচেতন জনগণ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী গত ১২ই মার্চ’ ১৬ তারিখ ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৭.১৪কি:মি ওভারলের কাজ উদ্ভোধন করেন। ১০ বছর পর ওভারলের কাজ শুরু হওয়ায় খুশি হয় বান্দরবানের সাধারণ মানুষ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম এডিশন্যাল বুরে‌্যা অফিস থেকে টেন্ডার এর মাধ্যমে কাজটি পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাব-আরসি প্রাইভেট লিমিটেড। বার আউলিয়া-টংকাবতী ১৪.৫ কিলোমিটার ও বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের ২২.৬৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বর্তমানে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের ২২.৬৪ কিলোমিটার এর কাজ চলছে।

২০সস ডাউন, ১৫সস, ১২সস, ৫ ঃ১০, ডাষ্ট ও বালি মিশানোর কথা থাকলেও নিয়মমত না মেশানোর ফলে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে থেকে যাচ্ছে ফাঁক। সিলেটের পাথর ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় বোল্ডার পাথর। এছাড়া ৬৫ সস লুজ আর চাপ দেওয়ার পর রাস্তা ৫০ সস (২ইঞ্চি) পুরু হবার করার কথা থাকলেও অধিকাংশ জায়গায় তার অর্ধেকও দেয়া হচ্ছেনা। আর সরকারী কার্যপত্র অনুযায়ী ৬০-৭০ গ্রেড এর বিটুমিন ব্যবহার করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৮০/১০০ গ্রেড এর বিটুমিন ওভারলে কাজে ব্যবহার করছেন। এ বিটুমিন গাড়ী যোগে চট্টগ্রামের মাদারবাড়ীর বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাহাঙ্গীর আলম এন্ড কোম্পানী থেকে আনা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয়রা বলেন, রাস্তাটি ৫০ সস পুরু করার কথা থাকলেও রেইচা লম্বা রাস্তা, রেইচা নামন্তি, কেওচিয়া, আমতলী, লাল ব্রিজসহ যেখানে লোকজন কম সেখানে কোন যেনতেন ভাবে লেপ দিয়ে চলে যাচ্ছে। ২৫ সস ও দিচ্ছেনা অনেক জায়গায়। এসব এলাকায় পাথরের মানও তেমন ভাল না। সঠিক পরিমানে পাথর ব্যবহার না করার কারনে ফিনিশিং ও ভাল হচ্ছেনা। প্রায় প্রতি এলাকায় থেকে যাচ্ছে গর্ত। অনেক জায়গায় এখনই উঠে যাচ্ছে পাথর।

রেইচার বাজারের কাশেম জানান, তাদের এলাকায় কাজ করার পরের দিনই অনেক জায়গায় পাথর উঠে যেতে শুরু করেছে। এছাড়া পাতলা লেভেল দিয়ে চলে যাচ্ছে তারা। এ ব্যাপারে তাদের সাথে ঠিকাদার ও সওজ এর কর্মকর্তাদের সাথে কাজের মান নিয়ে তর্কতর্কি হয়েছে বলেও তিনি জানান। তারা যেভাবে কাজ করছে তাতে ১ কোটি টাকার বেশি খরচ হবার কথা না। সব টাকা তারা লুটপাট করার কথা ভাবছে।

কেরানীহাটের নাজিম বলেন, এখানে যেভাবে কাজ করে তারা চলে যাচ্ছে তাতে রাস্তাটি এক বছরও টিকবে কিনা সন্দেহ আছে। বিটুমিনগুলো দেখে ভাল মনে হচ্ছেনা। আর পাথর গুলো ভাল খারাপ মিশানো রয়েছে। রাস্তায় ফাঁক থাকায় বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাবে। শীঘ্রই এ রাস্তাটি পরিদর্শনের জন্য তিনি যোগাযোগ মন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান।

বিটুমিন পরিবহনকারী গাড়ীর চালকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, চট্টগ্রামের মাদারবাড়ীর জাহাঙ্গীর আলম এন্ড কোম্পানী থেকে বিটুমিন গুলো আনা হচ্ছে।

এব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাব-আরসি প্রাইভেট লিমিটেড এর পিএম আনোয়ার হাজারী সাংবাদিককে বলেন, আমরা সব পাথরই সিলেট থেকে আনছি। এছাড়া বিটুমিন গুলো পদ্মার ইষ্টার্ণ রিফাইনারী থেকে আনা হচ্ছে। তবে ৬০/৭০ গ্রেড ব্যবহার না করে ৮০/১০০ গেড বিটুমিন ব্যবহার করছি।

এ ব্যাপারে বান্দরবান সড়ক উপ বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আশীষ মুখার্জী সাংবাদিককে বলেন, বিটুমিন কোন অবস্থাতেই ৮০/১০০ ব্যবহার করা যাবেনা। নিয়মমাফিক ৬০/৭ গ্রেডই ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, আমি সব সময় কাজ পরিদর্শন করছি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সব কিছু ঠিকটাক মতই দিচ্ছে। এখনো কাজে কোন গরমিল হয়নি।

বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তোফায়েল মিয়া সাংবাদিককে বলেন, ওভারলে কাজটি যেন স্থিতি অনুসারে শেষ করা যায় সে ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ ও আমি নির্বাহী প্রকৌশলী সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর মাধ্যমে কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার চেষ্ঠা করছি। কাজে আমরা কোন গরমিল পাইনি। পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ও বলেন, সারা বাংলাদেশেতো অনেক রাস্তার কাজ হচ্ছে কোথাও কখনো দেখেছেন পাথর ও বিটুমিন নিয়ে নিউজ করতে? আপনি কি ধরনের নিউজ করেন? আপনারতো খুশি হওয়া উচিত বান্দরবানে ওভারলের কাজ হচ্ছে। বান্দরবানের রাস্তায় কখনো মেশিনে কাজ করতে দেখেছেন? এখানে মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আর মেশিনে কাজ করলেতো একটু কমবেশিতো হতেই পারে। তাছাড়া ফিনিশিং খারাপ হতে পারে। এখানেতো আমাদের কিছু করার নাই। তবে যাই হোক এত ভাল কাজ বান্দরবানে আর হয়নি।

পাঠকের মতামত: